ইসলামের দৃষ্টিতে কোরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুশীলন যা ঈদুল আযহা উৎসবের সময় পালন করা হয়। এটি হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এবং তার পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর প্রতি আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও ত্যাগের এক মহান উদাহরণ স্মরণ করিয়ে দেয়। কোরবানী করার মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন এবং তার সন্তুষ্টি অর্জন করা।
কোরবানীর মৌলিক উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য:
আল্লাহর প্রতি আনুগত্য: কোরবানীর মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর প্রতি তাদের সম্পূর্ণ আনুগত্য ও নির্ভরতা প্রদর্শন করে। এটি তাদের ঈমান ও ত্যাগের পরীক্ষা।
ইব্রাহিম (আঃ)-এর স্মরণ: কোরবানী করার মাধ্যমে মুসলমানরা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এবং হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর ত্যাগের কাহিনীকে স্মরণ করে। ইব্রাহিম (আঃ) তার পুত্র ইসমাইল (আঃ)-কে আল্লাহর আদেশে কোরবানী করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন, যা আল্লাহর প্রতি তার সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের একটি প্রতীকী উদাহরণ।
সামাজিক ন্যায়বিচার: কোরবানীর মাংস তিন ভাগে ভাগ করা হয় – একটি অংশ নিজ পরিবারে, একটি অংশ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে, এবং একটি অংশ দরিদ্র ও অভাবী মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এটি সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণের একটি মাধ্যম।
আত্ম-সংযম ও আত্মত্যাগ: কোরবানী করার মাধ্যমে মুসলমানরা তাদের নিজস্ব চাহিদা ও কামনা-বাসনাকে সংযম করে আল্লাহর প্রতি তাদের নিবেদন এবং আত্মত্যাগ প্রদর্শন করে।
কোরবানী করার নিয়মাবলী:
নিয়ত: কোরবানী করার আগে নিয়ত করতে হবে যে, এটি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হচ্ছে।
পশুর বয়স: কোরবানীর পশু নির্দিষ্ট বয়সের হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ছাগল বা ভেড়া কমপক্ষে এক বছরের হতে হবে এবং গরু বা উট কমপক্ষে দুই বছরের হতে হবে।
সুস্থতা: কোরবানীর পশু সম্পূর্ণ সুস্থ ও ত্রুটিমুক্ত হতে হবে।
কোরবানীর সময়: ঈদুল আযহার নামাজের পরে কোরবানী করতে হবে এবং তা ঈদের তিন দিন (১০ থেকে ১২ জিলহজ্জ) চলতে পারে।
মাংস বন্টন: কোরবানীর মাংস তিন ভাগে ভাগ করা – নিজের জন্য, আত্মীয়-স্বজনের জন্য এবং দরিদ্রদের জন্য।
কোরবানী ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ এবং এটি মুসলমানদের ঈমানের পরীক্ষা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, এবং আল্লাহর প্রতি ত্যাগ ও আনুগত্য প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম
