Dark Mode
Saturday, 27 April 2024
Logo
দীর্ঘমেয়াদি সরকার বনাম টেকসই উন্নয়ন

দীর্ঘমেয়াদি সরকার বনাম টেকসই উন্নয়ন

সম্পাদকীয়  : দীর্ঘমেয়াদি সরকার একটি দেশের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে টেকসই উন্নয়নের সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। যদিও কিছু নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে তথাপি সামগ্রিক উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি সরকারের ইতিবাচক দিক অনেক। তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর অস্থিরতা, স্থিতিহীনতা ও বারবার ক্ষমতার পালাবদল স্থায়ী ও টেকসই উন্নয়নের অন্যতম অন্তরায়।


বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত মাত্র কয়েক বছরে যেভাবে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুর্নগঠন করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ আর্থসামাজিক অবস্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে অনেক আগেই এ দেশ উন্নত রাষ্ট্রে রুপান্তরিত হতো। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে এদেশ পাথ হারিয়ে সামরিক শাসনের যাঁতাকলে আটকিয়ে যায়। পথ হারায় গণতন্ত্র।

১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯১ সামরিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট হয় এদেশ। পিছিয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য থেকে। বাধাগ্রস্থ হয়ে যায় সামগ্রিক উন্নয়ন। নানা আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে পূণরায় ফিরে আসে এদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র। সেই ধারাবাহিকতায় আজো সংসদীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান রয়েছে,তবে।

১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পালাবদল করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। যারযার জায়গা থেকে উভয় দলই সরকার গঠন করে দেশের সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এ সময়ে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। এ ধীরগতির অন্যতম কারণ ঘনঘন ক্ষমতার পালাবদল। এক সরকারের পাসকৃত প্রকল্পের কাজ শেষ না-হতেই অন্য সরকার ক্ষমতায় আসার পর আগের সরকারের গৃহীত বহু প্রকল্প ধীরগতিতে সমাপ্ত হতো, অনেক প্রকল্প বাজেয়াপ্ত হতো, সময় ও অর্থ অপচয় হতো। এভাবেই টেকসই উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে থাকতো দেশ।


২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা এক সরকার বিদ্যমান থাকায় বাংলাদেশ এক অভূতপূর্ব উন্নয়নের পথে হেটে এগিয়েছে বহুদূর। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর আলোচনার বিষয়বস্তু আজ বাংলাদেশ। গণতান্ত্রিক দেশ সমালোচনা থাকাটা স্বাভাবিক। দীর্ঘমেয়াদি এ সরকারের কিছুটা নেতিবাচক দিকও রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি সরকার সজাগ দৃষ্টি রেখে নেতিবাচক দিকগুলোর প্রকৃতি ও কারণ চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করলে উন্নয়নের ধারা স্থায়ী হবে। তবে হাজারো খাতে এ সরকারের চলমান সামগ্রিক ও টেকসই উন্নয়ন কাছে তা কিছুইনা। সমগ্র বিশ্বে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিণত হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি সরকারের কারণেই। নতুবা আগের মতো ক্ষমতার পালাবদল হতে থাকলে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়তো সম্ভবপর হয়ে উঠতোনা।

বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে টিকে থাকতে হলে টেকসই উন্নয়নের বিকল্প নেই। টেকসই উন্নয়ন একটি দেশের জীবনধারার মান উন্নত করতে সক্ষম। বর্তমান বিশ্ব নানা সংকটময় মুহূর্তে রয়েছে। মহামারি করোনা ভাইরাসের পরবর্তী বিশ্বে এখন নানামুখী সংকট তৈরি হয়েছে। এদিকে রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী নানা সংকট তৈরি করেছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার কারণে বহুমুখী সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

সর্বপরি সবদিক থেকে বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করে, বিশ্বব্যাপী নানা সংকট দূর করে, দেশের আভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান করে চলমান টেকসই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে দেশে দীর্ঘমেয়াদি সরকার ক্ষমতায় আছে বলে। কেননা মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ টানা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতায় থেকে উন্নত দেশে রুপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছে মালয়শিয়াকে।

এবি সিদ্দিক



Comment / Reply From