Dark Mode
Friday, 26 April 2024
Logo
হরকাতুল জিহাদ হুজির ছয় সদস্য গ্রেপ্তার

হরকাতুল জিহাদ হুজির ছয় সদস্য গ্রেপ্তার

শুক্রবার ২৭ শে জানুয়ারী নিষিদ্ধ সংঘঠন হরকাতুল জিহাদ হুজির ছয় সদস্যকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। 

গ্রেপ্তারকৃত হুজির সদস্যরা হলেন- (১) মোহাম্মদ সুরুজ্জামান ৪৫, (২) হাফেজ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন ২৩, (৩) মো. ফখরুল ইসলাম (৫৮), (৪) মো. সাইফুল ইসলাম (২৪), (৫) মো. দীন ইসলাম (২৫), (৬) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪৬) । 

গ্রেপ্তারের সময় তাদের থেকে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানীর ৯ টি সিম ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে তারা এসব মোবাইল ও সিম দেশে বিদেশে জঙ্গি কাজে ব্যবহার করতো । 

কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম, জানায়, বিদেশ হতে জঙ্গি বিষয়ে ট্রেনিংপ্রাপ্ত বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি’র) সক্রিয় সদস্য মো. ফখরুল ইসলাম ১৯৮৮ সালে গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানাধীন তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় তিনি দারোয়ানের চাকরি করতেন। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে কাজের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ হতে পাকিস্তানের করাচি শহরে গমন করেন। তিনি পাকিস্তানে অবস্থানকালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মুফতি জাকির হোসেনের সঙ্গে পরিচয় হয়।

আরও জানায়, মুফতি জাকির হোসেন যিনি পাকিস্তানের করাচি শহরে ইসলামীয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এবং আল কায়েদার সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। মুফতি জাকির আল কায়েদা সংগঠনের জিহাদী ট্রেনিংয়ের কমান্ডার। মুফতি জাকির মো. ফখরুল ইসলাম’কে জিহাদের দাওয়াত দিলে সে দাওয়াত গ্রহণ করেন। ফখরুল ইসলাম জিহাদী ট্রেনিং-এ অংশগ্রহণের জন্য মুফতি জাকিরের সঙ্গে একাধিকবার পাকিস্তান হতে আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে দীর্ঘকালীন প্রশিক্ষণে যায়।

ফখরুল উক্ত ট্রেনিং-এ বিভিন্ন অস্ত্র প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র- অক ৪৭, এলএমজি ও রকেট লাঞ্চার পরিচালনা শিখেন। ট্রেনিংয়ের সময় কান্দাহারের সমশেদ পাহাড়ে তিনি নিয়মিত ফায়ারিং অনুশীলন করতেন। অনুশীলনের সময় ফখরুল ইসলাম অক ৪৭ সহ সশস্ত্র অবস্থায় প্রশিক্ষণ এলাকায় ৪ ঘণ্টা করে নিরাপত্তামূলক পাহারা ডিউটি করতেন। উক্ত সময়ে তিনি আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন। তিনি আফগানিস্তানে বিভিন্ন মেয়াদে জিহাদী ট্রেনিং করার পর পুনরায় পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে আসেন। করাচি থেকে ১৯৯৫ সালে ইরানের রাজধানী তেহরান যান এবং প্রায় ৩ বছর সেখানে থাকার পর করাচিতে ফিরে এসে তিনি পরবর্তীতে ইসলামাবাদ থেকে ভারতের ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সনে বাংলাদেশে চলে আসেন।

আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা সিটিটিসি’র জঙ্গি কার্যক্রম বিরোধী অপারেশন চলমান থাকায় এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের মুফতি হান্নানসহ একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি গ্রেপ্তার হওয়ায় হরকাতুল জিহাদ সংগঠনটি নেতৃত্ব শূন্য হয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে এসে ফখরুল ইসলাম জঙ্গি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি’র) সদস্য সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহ করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তিনি সাংঠনিক কার্যক্রম সশরীরে ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যম ব্যবহার করে অব্যাহত রাখেন।

তিনি অত্যাধুনিক সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যম এনক্রিপটেড অ্যাপস ‘ইরচ’ ব্যবহারের মাধ্যমে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের এবং বাংলাদেশের অন্যান্য হুজি সদস্যদের সাথে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক বিষয়ে আলোচনা করে ম্যাসেজ আদান প্রদান করেন এবং যেকোন সময় বাংলাদেশের গুরুপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা পরিচালনার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা করেন। বাংলাদেশের হুজি সদস্যদের বান্দরবন পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করে।

তিনি ও তার ছেলে আটককৃত আসামি মো. সাইফুল ইসলাম (২৪) অন্যান্য হুজি সদস্যদের নিয়ে একাধিকবার কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের তাদের সংগঠনে রিক্রুটের উদ্দেশ্যে এবং জিহাদী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রাণিত করার উদ্দেশ্যে তাদেরকে বিভিন্ন মোটা অংকের টাকা অনুদান প্রদান করেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, তারা সক্রিয় থেকে উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। গ্রেপ্তারকৃত ও তাদের অন্যান্য সহযোগীরা পরস্পরের যোগসাজসে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক ভিডিও ও তথ্য শেয়ার এবং নিজেদের মধ্যে গোপন তথ্য আদান প্রদান করে থাকে। তারা গ্রুপে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক প্রশিক্ষণের বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি সচিত্র প্রশিক্ষণ ডকুমেন্টস (পিডিএফ, ভিডিও, অডিও) আদান প্রদান করতো। পলাতক অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানায় সিটিটিসি।

গ্রেপ্তারকৃতদের নামে থানায় মামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়েছে । 

 



Comment / Reply From